আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব। । অশ্রুসজল নয়নে ভক্তকুল দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাবেন। দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছিল, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তার সমাপন ঘটছে। আগামী শরতে বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে আবার দেবী ফিরে আসবেন- এমন প্রত্যাশা নিয়েই মাকে বিদায় জানাবেন ভক্তরা। শাস্ত্র মতে, এবার মা দুর্গা এসেছেন ঘোটকে চড়ে, যাবেনও ঘোটকে চড়ে।
পুরাণমতে, 'দুর্গম' মতান্তরে মহিষাসুর নামক এক অসুর ছিল। তার কাজ ছিল সৃষ্টিকুলকে দুর্গতিতে ফেলা। সেই দুর্গম অসুরকে বধ করায় দেবীর নাম হয়েছে দুর্গা। দুর্গমকে বধ করে যিনি স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবতাদের হৃত রাজ্যে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং জীবজগৎকে চিরকাল দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। ভারতবর্ষের বাঙালি হিন্দু মানসে দুর্গা প্রতিবাদের দেবী, প্রতিরোধের দেবী। একই সঙ্গে তিনি 'মাতৃরূপে' ও 'শক্তিরূপে'। দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করায় বিজয় ঘটে শুভশক্তির। দেবীর আগমন ঘটে অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্য। মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভুত করার জন্য। দুর্গা দেবীর মাতৃরূপ ও শক্তিরূপ বাঙালি হিন্দু মানসে আজও সমুজ্জ্বল। তিনি কেবল সৌন্দর্য-মমতা-সৃজনের আধার হিসেবেই বিবেচিত হন না, তিনি অসহায় ও নিপীড়িতের আশ্রয় বলেও গণ্য হন। তার এক রূপ অসুরবিনাশী, আরেক রূপ মাতৃময়ী ভালোবাসার। শক্তি ও মমতার এই দুই শক্তির গুণেই তিনি দেবকুলের কাছে পরম পূজনীয় হিসেবে গণ্য হন। মানবকুলের জন্য তিনি বহন করে আনেন মঙ্গলবার্তা। যে কোনো ধর্মের পরম প্রতীকের গুরুত্ব এখানেই যে, তা সব মানুষের মধ্যেই শুভবোধের সঞ্চার ঘটাতে সক্ষম। এটাই ধর্মীয় প্রতীকের সর্বজনীন তাৎপর্য। দুর্গোৎসব ধর্মীয় উৎসব হলেও তা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়ে সম্প্রদায়গত বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে এক পরম আনন্দের সোপানে দাঁড় করিয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল আরাধনার উপলক্ষই নয়, তা আনন্দ-মিলনের সুযোগও। সেই আনন্দ ধর্ম সম্প্রদায়ের গন্ডি ছাপিয়ে সমাজের সবাইকে আবাহন করে। কাছে ডেকে নেয়। দুর্গোৎসব তাই দিনে দিনে হয়ে উঠেছে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বৃহৎ সামাজিক উৎসব।
বাংলাদেশ বরাবরই ধর্মীয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন। সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। ধর্ম যার যার উৎসব সবার- এই অধিকার নিশ্চিত হয়েছে মানুষের। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে আনন্দঘন আবহের সৃষ্টি হয়েছে। দেশব্যাপী বইছে নির্মল সম্প্রীতি থেকে উৎসারিত উৎসবের ফল্গুধারা। সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব পালনের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণময় অবস্থানের বিকাশ আরও বিস্তৃত এবং বিকশিত হয়। উপরন্তু অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে মঙ্গলদায়ক, শুভশক্তি ও ইতিবাচক চেতনার সম্প্রসারণ ঘটে। পূজায় এবার দেশের কোথাও তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক সহিষ্ণুতা ও উদারতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরদারি এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।
দুর্গোৎসবের মধ্য দিয়ে দূর হোক সব সংকীর্ণতা ও বিভেদ- মা যেন সেই শক্তি, সৌহার্দ্য সবার হৃদয়ে ও মনে জাগ্রত করেন।
সর্বোপরি প্রত্যাশা থাকবে, শারদীয় দুর্গোৎসবের এই সম্প্রীতির ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা অটুট থাক। সর্বত্র সত্য, ন্যায় ও শুভশক্তির জয় হোক। আজকের দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বী সবার প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। শুভ বিজয়া।
Courtsy: www.jaijaidinbd.com
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Tuesday, October 08, 2019
আজ বিজয়া দশমী
Tags
# Biggest Festival
# Bijaya Dashami
# Dosomi
# Durga puja
# Hindu Religion Festival
About WooBebe
Hindu Religion Festival
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post Top Ad
Responsive Ads Here
No comments:
Post a Comment